
প্লেজারিজম (Plagiarism) মানে হলো অন্য কারো লেখা বা ধারণাকে নিজের নামে উপস্থাপন করা। আমি যখন প্রথম কনটেন্ট লেখা শুরু করি, তখন বুঝতাম না “প্লেজারিজম” আসলে কতটা গুরুতর বিষয়। পরে দেখলাম গুগল এবং একাডেমিক প্ল্যাটফর্মগুলো এটাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেয়।
ব্লগিং, অ্যাসাইনমেন্ট, এমনকি ইউটিউব স্ক্রিপ্ট লেখার সময়ও এখন অনেকেই প্লেজারিজম চেকার ব্যবহার করেন। আমিও নিয়মিত Grammarly বা QuillBot দিয়ে কনটেন্ট চেক করি যাতে লেখা একদম ইউনিক থাকে।
২০২৬ সালে নতুন নতুন AI টুল আসছে, আর সেগুলোর সঙ্গে পুরনো টুলগুলোও নিজেদের আপডেট করছে। তাই এই সময়টা হলো নতুন ও উন্নত প্লেজারিজম চেকার সম্পর্কে জানার সেরা সময়।
2. প্লেজারিজম চেকার কীভাবে কাজ করে (How Plagiarism Checker Works)
প্লেজারিজম চেকার মূলত আপনার লেখা কনটেন্টকে বিশাল একটি ডাটাবেসের সঙ্গে মিলিয়ে দেখে। আমি যখন আমার একটি আর্টিকেল Grammarly দিয়ে স্ক্যান করেছিলাম, তখন এটি একসঙ্গে লক্ষ লক্ষ ওয়েবসাইটের সঙ্গে তুলনা করে দেখেছিল কোন লাইনে মিল আছে।
এই টুলগুলো AI এবং Machine Learning ব্যবহার করে কনটেন্টের টোন, বাক্য গঠন এবং প্যাটার্ন বিশ্লেষণ করে। এমনকি আপনি যদি কোনো বাক্য ঘুরিয়ে লেখেন, সেটিও অনেক সময় ধরতে পারে!
চেকিং শেষে আপনি একটি রিপোর্ট পান যেখানে শতকরা হারে দেখা যায় কত শতাংশ কনটেন্ট ইউনিক। কিছু টুল রিয়েল-টাইম ফিডব্যাক দেয়, যেমন Grammarly।
3. ২০২৬ সালের সেরা ৫টি প্লেজারিজম চেকার টুল (Top 5 Tools List 2026)
1. Grammarly Plagiarism Checker
Grammarly শুধু ব্যাকরণ ঠিক করার জন্য নয়, বরং এটি একটি শক্তিশালী প্লেজারিজম ডিটেকশন টুলও। আমি প্রায় প্রতিদিন এই টুলটি ব্যবহার করি। কালকেই একটি ব্লগ পোস্টে Grammarly ব্যবহার করে দেখলাম—একটি বাক্য ৯৮% ইউনিক দেখাল।
ফ্রি ভার্সনে শুধু ব্যাকরণ চেক করা যায়, কিন্তু প্রিমিয়াম ভার্সনে প্লেজারিজম রিপোর্ট পাওয়া যায়। তবে একটি সমস্যা হলো মাঝে মাঝে Grammarly একটু ধীরে কাজ করে এবং ইন্টারনেট কানেকশন না থাকলে ফিডব্যাক দেয় না।
তবুও, লেখকদের জন্য এটি একটি অসাধারণ টুল কারণ এটি একই সঙ্গে ব্যাকরণ, টোন এবং প্লেজারিজম তিনটিই চেক করে।
2. QuillBot Plagiarism Checker
QuillBot মূলত একটি AI রিরাইট টুল, তবে এর Plagiarism Checker এখন খুবই জনপ্রিয়। আমি এই মাসে QuillBot ব্যবহার করেছি প্রায় ১০টি প্রজেক্টে—বিশেষ করে যখন ইংরেজি আর্টিকেল রিরাইট করতে হতো।
এর রিপোর্ট সিস্টেম খুবই পরিষ্কার এবং আমি পছন্দ করি এর রঙভিত্তিক হাইলাইট সিস্টেম। তবে ফ্রি ভার্সনে সীমাবদ্ধতা আছে; পুরো সুবিধা পেতে প্রিমিয়াম দরকার।
যারা কনটেন্ট ক্রিয়েটর বা ফ্রিল্যান্স রাইটার, তাদের জন্য QuillBot সত্যিই দারুণ একটি টুল।
3. Turnitin
Turnitin সাধারণত একাডেমিক লেখালেখির জন্য ব্যবহৃত হয়। আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম, তখন আমাদের শিক্ষকরা এই টুল দিয়ে অ্যাসাইনমেন্ট চেক করতেন।
এর রিপোর্ট খুব বিস্তারিত—কোন বাক্য কোথায় মিলছে, সোর্স কী, এমনকি রেফারেন্স ভুল হলে তাও দেখায়। তবে এটি সাধারণ ইউজারদের জন্য ফ্রি নয়, সাধারণত প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক অ্যাক্সেস থাকে।
যদি আপনি শিক্ষক বা ছাত্র হন, তাহলে Turnitin সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য টুল।
4. SmallSEOTools
এটি আমার ফেভারিট ফ্রি টুলগুলোর একটি। গত সপ্তাহে আমি একটি SEO আর্টিকেল লিখে SmallSEOTools দিয়ে চেক করেছিলাম, মাত্র ১ মিনিটেই পুরো রিপোর্ট পেয়ে গেছি!
তবে একটা অসুবিধা হলো—এখানে অনেক বিজ্ঞাপন থাকে, যা মাঝে মাঝে বিরক্তিকর। কিন্তু পারফরম্যান্স দারুণ, এবং এটি ব্যাচ ফাইল চেকিংও করতে পারে।
মোবাইল ভার্সনেও বেশ ভালো কাজ করে, তাই অনেক সময় আমি ফোন থেকেই কনটেন্ট চেক করি।
5. Duplichecker
Duplichecker বিশেষভাবে SEO কনটেন্ট লেখকদের জন্য তৈরি। আমি একবার একটি লম্বা আর্টিকেল চেক করতে গিয়ে অন্য টুলে আপলোড সমস্যা পাচ্ছিলাম, তখন Duplichecker ব্যবহার করি এবং সহজেই রিপোর্ট পাই।
এটি ১০০০ শব্দ পর্যন্ত ফ্রি চেক করতে দেয়, আর প্রিমিয়াম ভার্সনে আপনি বড় ফাইলও আপলোড করতে পারবেন।
এর একটি বাড়তি সুবিধা হলো এটি ব্যাচ চেক করতে পারে এবং রিপোর্ট সহজে ডাউনলোড করা যায়।
4. কোন টুলটি আপনার জন্য সেরা (Which Tool Should You Use?)
আপনি যদি ছাত্র হন, তাহলে Turnitin আপনার জন্য উপযুক্ত, কারণ এটি একাডেমিক মানদণ্ডে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য।
যদি ব্লগার হন, তাহলে আমি পরামর্শ দেব Grammarly বা QuillBot ব্যবহার করতে। Grammarly ব্যাকরণ ঠিক রাখে, আর QuillBot লেখাকে স্মার্টভাবে পুনর্লিখন করতে সাহায্য করে।
যারা একদম নতুন, তাদের জন্য SmallSEOTools এবং Duplichecker সবচেয়ে সহজ ও ফ্রি বিকল্প।
তবে মনে রাখবেন, প্রিমিয়াম টুল সবসময় বেশি সঠিক ফলাফল দেয়, কারণ তাদের ডাটাবেস অনেক বড় ও আপডেটেড।
5. প্লেজারিজম এড়ানোর টিপস (Tips to Avoid Plagiarism)
সবসময় নিজের ভাষায় কনটেন্ট লিখুন। আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রতিটি আর্টিকেল লেখার পর একবার নিজের মতো করে রিড করি, যেন কারো লেখা অনিচ্ছাকৃতভাবে কপি না হয়।
যে কোনো তথ্য ব্যবহার করলে সোর্স উল্লেখ করুন। এটি আপনার কাজকে পেশাদার এবং বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে।
AI টুল যেমন ChatGPT বা QuillBot দিয়ে লেখা তৈরি করলে অবশ্যই চেক করুন, কারণ AI কনটেন্টেও প্লেজারিজম থাকতে পারে।
আর সবচেয়ে বড় টিপস হলো — কনটেন্ট লেখাকে অভ্যাসে পরিণত করুন, কপি-পেস্ট নয়।
6. উপসংহার (Conclusion)
প্লেজারিজম চেকার শুধু ভুল ধরার টুল নয়, এটি একজন লেখকের সততা ও মান বজায় রাখার প্রতীক।
২০২৬ সালের এই ডিজিটাল যুগে কনটেন্ট ইউনিক রাখা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমি নিজেও প্রতিদিন কনটেন্ট লেখার আগে ও পরে অন্তত একটি টুল ব্যবহার করি।
সঠিক টুল বেছে নিয়ে নিয়মিত ব্যবহার করলে আপনি যেমন নিজের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে পারবেন, তেমনি গুগল বা ক্লায়েন্টের কাছেও পেশাদার ইমপ্রেশন তৈরি হবে।
Leave a Reply