
আমার প্রথম ওয়েবসাইট বানানোর গল্পটি শুরু হয়েছিল একদিন, যখন আমি বুঝতে পারলাম আমার নিজস্ব ধারণা এবং কাজগুলো অনলাইনে ভাগ করার জন্য একটি স্থায়ী প্ল্যাটফর্ম প্রয়োজন। আমি ছোট একটি ব্লগ শুরু করতে চেয়েছিলাম, যেখানে আমি আমার টেক, লার্নিং এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারব। শুরুতে মনে হয়েছিল, ওয়েবসাইট বানানো সম্ভবত জটিল এবং ব্যয়বহুল কাজ।
আমার লক্ষ্য ছিল দুটি প্রধান দিক পূরণ করা: একটি পার্সোনাল ব্র্যান্ড তৈরি করা এবং ব্লগিংয়ের মাধ্যমে শেখার প্রক্রিয়াটি সহজভাবে সকলের সঙ্গে ভাগ করা। সেই সময় আমি জানতাম না, কীভাবে খরচ কমিয়ে দিয়ে সম্পূর্ণ ফ্রি প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা যায়। তাই প্রথমে আমি বাজারে থাকা বিভিন্ন বিকল্প সম্বন্ধে গবেষণা শুরু করি।
শুরুতে আমার অনেক ভয় ছিল। আমি ভাবতাম, হয়তো প্রযুক্তিগত জ্ঞান না থাকায় আমি সমস্যায় পড়ব। এছাড়া, ফ্রি প্ল্যাটফর্মের সীমাবদ্ধতা কি আমার উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারবে? তবে ধীরে ধীরে চেষ্টা এবং অনুসন্ধানের মাধ্যমে আমি শিখতে শুরু করি।
প্রথম সফলতা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছিল। আমি যখন প্রথম পেজটি তৈরি করতে সক্ষম হই, তখন অনুভব করি, প্রযুক্তিগত জ্ঞান না থাকলেও, সঠিক গাইডলাইন অনুসরণ করে এবং কিছু ধৈর্য ধরে ফ্রি প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আমি আমার উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারি। সেই প্রথম লার্নিং ছিল মূল্যবান: প্ল্যানিং, কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট এবং ট্রায়াল-এন্ড-এরর পদ্ধতি কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
২. বাজারে ওয়েবসাইট তৈরির বিকল্প এবং খরচের ধারণা
বাজারে ওয়েবসাইট তৈরির বিভিন্ন বিকল্প রয়েছে। প্রিমিয়াম প্ল্যাটফর্ম যেমন WordPress.org, Wix, Squarespace উচ্চ মানের কাস্টমাইজেশন এবং প্রসারিত ফিচার সরবরাহ করে। তবে এগুলোর মাসিক বা বার্ষিক খরচ প্রায় ১০–৩০ ডলার পর্যন্ত হতে পারে।
ফ্রি প্ল্যাটফর্ম যেমন Blogger, WordPress.com, Google Sites, Carrd সহজ, সীমিত কাস্টমাইজেশন এবং কোনও খরচ ছাড়াই ব্যবহারের সুযোগ দেয়। আমি নিজে প্রাথমিকভাবে ফ্রি প্ল্যাটফর্মগুলোর দিকে মনোযোগ দিয়েছিলাম। আমার তুলনায়, ফ্রি প্ল্যাটফর্ম সহজ এবং শিক্ষার জন্য যথেষ্ট কার্যকর।
প্রয়োজনীয় প্লাগইন এবং অ্যাড-অনসের জন্য যদি প্রিমিয়াম ব্যবহার করা হয়, তবে খরচ উল্লেখযোগ্য হয়। আমি নিজে যখন প্রথমে ওয়েবসাইট বানাচ্ছিলাম, তখন বুঝতে পেরেছিলাম, শুধুমাত্র ফ্রি টুলস ব্যবহার করেও একটি সুন্দর ও কার্যকর ওয়েবসাইট তৈরি করা সম্ভব।
শেষমেষ, আমি ফ্রি প্ল্যাটফর্ম বেছে নিই, কারণ এটি আমার জন্য শিক্ষার সুযোগ এবং ঝুঁকি কমানোর একটি সহজ উপায় ছিল। এটি আমাকে অনলাইন প্রেজেন্স তৈরি করতে সহায়তা করেছিল, অথচ কোনও অতিরিক্ত খরচ হয়নি।
৩. ফ্রি ওয়েবসাইট তৈরি করার ধাপসমূহ
ফ্রি ওয়েবসাইট তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয় সঠিক প্ল্যাটফর্ম নির্বাচন থেকে। আমি প্রথমে Google Sites এবং WordPress.com পরীক্ষা করি। অবশেষে WordPress.com বেছে নিই, কারণ এটি ব্যবহারবান্ধব, টেমপ্লেট ও কাস্টমাইজেশন সহজ এবং ফ্রি সাবডোমেইন প্রদান করে।
সাইনআপ এবং শুরু করার অভিজ্ঞতা ছিল সরল। আমি প্রথমে প্রাথমিক তথ্য দিয়ে একটি একাউন্ট খুলে নিয়েছিলাম এবং ধাপে ধাপে ওয়েবসাইটের স্ট্রাকচার সেটআপ করি। এই প্রক্রিয়ায় প্রথম দিকে কিছু বিভ্রান্তি ছিল, যেমন কোন টেমপ্লেট ব্যবহার করা উচিত এবং পেজের লেআউট কেমন হওয়া উচিত।
ডোমেইন নেম নির্বাচন করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ ছিল। আমি প্রথমে ফ্রি সাবডোমেইন ব্যবহার করি, যেমন mywebsite.wordpress.com। প্রাথমিক অভিজ্ঞতা দেখিয়েছিল যে, ফ্রি ডোমেইন ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে সীমিত হলেও ব্লগিং এবং শিখার জন্য যথেষ্ট।
টেমপ্লেট বেছে নেওয়া এবং কাস্টমাইজেশনও একটি চ্যালেঞ্জ ছিল। প্রথমে আমি কিছু টেমপ্লেট চেষ্টা করি, কিন্তু আমার কল্পনা অনুযায়ী লেআউট খারাপ লাগছিল। অবশেষে, আমি একটি ফ্রি টেমপ্লেট বেছে নিই যা সহজ এবং সুন্দর লেআউট প্রদান করে।
প্রথম পেজ তৈরি করার সময়, আমার একাধিক সমস্যা হয়েছিল। বিশেষ করে মিডিয়া যোগ এবং লিঙ্ক সংযোগ করার সময়। তবে ধৈর্য এবং গাইডলাইন অনুসরণ করে সমস্যাগুলো সমাধান করি। প্রথম পেজ লাইভ হওয়ার পর অনুভব করি, সত্যিই ফ্রি প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেও প্রাথমিক স্তরের ওয়েবসাইট তৈরি সম্ভব।
৪. কন্টেন্ট তৈরি এবং আমার অভিজ্ঞতা
ব্লগ পোস্ট বা পেজ যোগ করার প্রক্রিয়া শুরু করি আমি। প্রথমে লিখতে বসে মনে হয়েছিল, কন্টেন্ট কেমন হবে। আমি নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং শেখার বিষয়গুলোকে কেন্দ্র করে লেখা শুরু করি। প্রথম ব্লগ পোস্ট তৈরি করার সময়, SEO বা সঠিক ট্যাগ ব্যবহার সম্পর্কে খুব বেশি ধারণা ছিল না।
ছবি, ভিডিও এবং মিডিয়া ব্যবহারের অভিজ্ঞতাও অনন্য ছিল। আমি প্রথমে Unsplash থেকে ফ্রি ছবি ব্যবহার করি এবং নিজস্ব ছবি আপলোড করি। কিছু ছবি সঠিকভাবে লোড হচ্ছিল না। ধাপে ধাপে আমি শিখি, কিভাবে ছবি অপ্টিমাইজ করে ওয়েবসাইট দ্রুত লোড করানো যায়।
SEO এর জন্য প্রাথমিক সেটআপ করি। প্রতিটি পোস্টে Meta Description, Keywords, Alt Text ব্যবহার করি। প্রথম কিছু ভুল করি, যেমন Alt Text না দেওয়া বা ভুল Keywords ব্যবহার করা। পরে গাইডলাইন অনুসরণ করে সেগুলো ঠিক করি।
প্রথম দর্শক বা রিডারের ফিডব্যাকও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যখন আমার বন্ধু এবং কয়েকজন পরিচিতি ব্লগটি দেখল, তারা অনেক ইতিবাচক মন্তব্য দেয়। এই ফিডব্যাক আমাকে অনুপ্রাণিত করে আরও ভাল কন্টেন্ট তৈরিতে।
৫. ফ্রি টুলস এবং রিসোর্স ব্যবহার করা
ফ্রি ইমেজ এবং গ্রাফিক্সের জন্য Canva এবং Unsplash আমি ব্যবহার করি। প্রথমে কিছু অসুবিধা ছিল, যেমন ফাইল ফরম্যাট বা সাইজ সমন্বয় করা। তবে ধীরে ধীরে আমি সহজভাবে ছবি এবং গ্রাফিক্স ব্যবহার করতে শিখি।
ফ্রি SEO টুলস এবং ট্র্যাকিংয়ের জন্য Google Analytics এবং Google Search Console ব্যবহার করি। প্রথমবারে সেটআপ করা কঠিন মনে হলেও, কিছু ভিডিও টিউটোরিয়াল দেখে ধাপে ধাপে আমি সমস্ত সেটআপ সম্পন্ন করি।
আমার ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা বলছে, ফ্রি টুলগুলো খুব কার্যকর। প্রথমে কিছু জটিল মনে হলেও সময়ের সঙ্গে অভ্যাসে সহজ হয়ে যায়। আমি নিজে কিছু ট্রিকস ব্যবহার করি, যেমন কন্টেন্ট শিডিউল করা এবং অ্যানালিটিক্স পর্যবেক্ষণ করা।
সময় বাঁচানোর জন্য কিছু ট্রিকস আমি খুঁজে পাই। উদাহরণস্বরূপ, Canva থেকে সরাসরি ওয়েবসাইটের জন্য ছবি তৈরি করা এবং WordPress-এর ব্লক এডিটর ব্যবহার করে দ্রুত পোস্ট তৈরি করা। এই ফ্রি টুলস আমার জন্য অনেক কার্যকর প্রমাণিত হয়।
৬. খরচ-সাশ্রয় এবং আমার বাস্তব হিসাব
ফ্রি বনাম পেইড প্ল্যাটফর্ম তুলনা করে দেখি, আমি প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায় ১০০% খরচ সাশ্রয় করি। প্রথম দিকে শুধু ফ্রি সাবডোমেইন ব্যবহার করি, যা খরচ শূন্য। এছাড়া, ফ্রি টেমপ্লেট এবং ফ্রি প্লাগইন ব্যবহার করে প্রাথমিক সব কাজ সম্পন্ন করি।
তবে কিছু অপ্রত্যাশিত খরচও ছিল। যেমন, কিছু প্রিমিয়াম টুলসের প্রয়োজন পড়লে সামান্য খরচ করতে হয়। আমি চেষ্টা করি যতটা সম্ভব ফ্রি রিসোর্স ব্যবহার করতে।
ফ্রি প্ল্যাটফর্মের সীমাবদ্ধতা কিছু আছে। যেমন সীমিত কাস্টমাইজেশন, সাবডোমেইনের সীমাবদ্ধতা, এবং ফ্রি টেমপ্লেটের কম বৈচিত্র্য। তবে আমি ধৈর্য ধরে এগুলো কাটিয়ে উঠি।
আমার নিজের টিপস হলো, পরিকল্পনা বানানো, ফ্রি রিসোর্সের সর্বোচ্চ ব্যবহার করা এবং প্রথমে ছোট করে শুরু করা। এতে খরচ শূন্য রেখে সুন্দর এবং কার্যকর ওয়েবসাইট তৈরি সম্ভব।
Leave a Reply